সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ অপরাহ্ন

কলকাতার হাসপাতালে বাংলাদেশি নারীর বিরল অপারেশন

অনলাইন ডেস্ক / ১৬৭ Time View
Update : শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪
কলকাতার হাসপাতালে বাংলাদেশি নারীর বিরল অপারেশন

স্বাভাবিকভাবে হৃৎপিণ্ডসহ মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো থাকে বাঁ দিকে। তবে অনেক সময় এর উল্টো চিত্রও দেখা যায়। কখনো হৃৎপিণ্ড, আবার কখনো ফুসফুস কিংবা যকৃৎ কারও শরীরের ডান দিকে রয়েছে এমন অবাক করা তথ্য পাওয়া যায়। তবে এবার শুধুমাত্র কোনো একটি অঙ্গ নয়, বরং এক নারীর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও পাওয়া গেছে ডান দিকে।

সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশি এক নারী অপারেশন করাতে গেলে, এমন বিরল ঘটনা সামনে আসে। জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতার দুটি হাসপাতালে ‘অতি বিরল’ দুটি হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের অপারেশন সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকরা। দুই রোগীর মধ্যে একজন বাংলাদেশি ও অন্যজন ভারতের নাগরিক।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি ওই নারীর শুধু হার্ট-ই নয়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন: ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী- সবকিছুই ডান দিকে রয়েছে। ৪০ লক্ষ মানুষের মধ্যে একজন এমন পাওয়া যায়। এছাড়া ভারতীয় সেই রোগীর হৃৎপিণ্ড শরীরের ডান দিকে পাওয়া গেছে।

তবে বাংলাদেশি ওই নারীর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ডান দিকে অবস্থান কোনো রোগ নয়, এটি তার মায়ের গর্ভধারণের সময়কার একটি অবস্থা। এছাড়া ভারতীয় রোগীর হার্ট অপারেশন করে যে পেসমেকার বসানো হয়েছে, তার হৃৎপিণ্ড জন্মের সময়ে বাঁ দিকে থাকলেও কিছুটা বড় হওয়ার পর যক্ষ্মা রোগের কারণে সেটি স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গেছে। দুটি অপারেশনের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকদের দাবি, বিশ্বে আগে এরকম পেসমেকার বসানোর অপারেশন হয়নি।

রোগীর বুকের ডান দিকে ব্যথা
বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা ওই নারী মোনারাণী দাসের বছর দুয়েক আগে থেকে বুকের ডান দিকে ব্যথা শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন ডানদিকে যেহেতু ব্যথা, তাই অ্যাসিডিটি বা অম্বলের সমস্যা হচ্ছে।

অপারেশনের পরে এখন মিসেস দাস রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় তার মেয়ের কাছে।

সেখান থেকেই মোনারাণী দাস বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “বুকের ডান দিকে ব্যথা শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। এর মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক হয়। সেই চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়েই বাংলাদেশের ডাক্তারেরা বলেন যে আমার হার্ট বুকের ডান দিকে”।

তার কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দাস বলছিলেন যে তখনও তারা জানতেন না যে শুধু হার্ট নয়, শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গও উল্টোদিকে।

“মা কে কল্যানীর এক স্থানীয় ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম। তিনি কলকাতার মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়েতে ডা. সিদ্ধার্থ মুখার্জীর কাছে রেফার করে দেন বাইপাস অপারেশন করানোর জন্য,” বলছিলেন বিষ্ণুপ্রিয়া দাস।

এই হাসপাতালটির নাম সদ্য পরিবর্তন হয়েছে, এর আগে এটি আমরি হাসপাতাল -সল্টলেক বলেই মানুষের কাছে পরিচিত ছিল।

‘মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়ে’ বলছে “গত মাসের ২৪ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায় যে শুধু হৃৎপিণ্ড নয়, তার অন্যান্য প্রত্যঙ্গগুলিও উল্টোদিকে অবস্থান করছে।“

চিকিৎসকরা বলছেন যে, শুধু হৃদযন্ত্র বা হার্ট বাঁদিকের বদলে ডান দিকে থাকলে তাকে বলা হয় ডেক্সট্রোকার্ডিয়া আর এই বাংলাদেশি নারীর ক্ষেত্রে সব প্রত্যঙ্গগুলি উল্টোদিকে থাকার অবস্থাটিকে বলা হয় ‘ডেক্সট্রোকার্ডিয়া উইথ সাইটাস ইনভার্সিস’।

“অন্যান্য প্রত্যঙ্গ ডানদিকে না বাঁদিকে, সেটা নিয়ে আমাদের কোনও মাথা ব্যথা ছিল না। হার্ট ডানদিকে শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। তবে ডাক্তাররা বলেছিলেন যে চিন্তার কিছু নেই, বাইপাস অপারেশন করলে মা আবার সুস্থ হয়ে যাবেন,” জানাচ্ছিলেন মোনারাণী দাসের মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া দাস। সূত্র: বিবিসি বাংলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category